بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
নামায/সালাত (Salah)
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হাদীস থেকে বর্ণিত অনুবাদ- হযরত ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। যথা-
[১] আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া।
[২] নামায কায়েম করা।
[৩] যাকাত আদায় করা।
[৪] হজ্জ পালন করা।
[৫] রমযান মাসে রোযা রাখা ।[সহীহ বুখারী ও মুসলিম, হাদীস : ৮]
জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করার নামই হলো ইসলাম। আর এই আনুগত্য সাধারণতঃ পাঁচটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন— [১] মৌখিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করা- এর প্রতীক হচ্ছে- নামায। [২] কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করা— এর প্রতীক হচ্ছে- যাকাত । [৩] দৈহিক শ্রম এবং সম্পদ ব্যায়ের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করা- এর প্রতীক হচ্ছে- হজ্জ। [৫] পানাহার ও যৌবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করা- এর প্রতীক হচ্ছে- রোযা ।
সাধারণতঃ এই পাঁচটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে । এই পাঁচটি ছাড়া ইসলামের বাকী অন্যান্য ইবাদত এ পাঁচটি প্রক্রিয়ারই অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ নিকট নামায অতি মর্তবার এবাদত। আল্লাহ নিকট নামায অপেক্ষা অধিক প্রিয় এবাদত আর নাই। আল্লাহ পাক স্বীয় বন্দাগণের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন। যাহারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায রীতিমত পড়িবে, তাহারা বেহেশতের মধ্যে অতি বড় পুরস্কার এবং অনেক বেশী ছওয়াব পাইবে, আল্লাহ নিকট অতি প্রিয় হইবে। যাহারা নামায পড়ে না তাহারা মহাপাপী।
সালাত / নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত
নামায আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরয করেছেন ।অতএব, প্রত্যেকেরই নামায পড়া একান্ত আবশ্যক।প্রতিটি বালেগ, বিবেকবান নারী-পুরুষের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরয। যদি কেউ নামায তরক করে তাহলে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এজন্য তাকে পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর যদি কেউ নামায নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে কিংবা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
কুরআনের আলোকে নামায
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
۞وَاَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অনুবাদ— তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, আর আনুগত্য কর রাসূলের, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পার। [সূরা নূর : আয়াত-৫৬]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
۞حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلٰوةِ الْوُسْطٰى ق وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِيْنَ
অনুবাদ— তোমরা সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে । আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। [সূরা বাকারা : আয়াত-২৩৮]
আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেছেন-
وَاَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ ط وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِط
۞اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْ نَ بَصِيْرٌ
অনুবাদ- তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, [তার প্রতিদান] আল্লাহর কাছে পাবে।[সূরা বাকারা : আয়াত-১১০]
একাগ্রতার সাথে নামায আদায়ের ফযীলত
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
۞قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ۞ الَّذِينَ هُمْ فِىْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ
অনুবাদ- নিশ্চয়ই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামায খুশু-খুযুর সাথে আদায় করে। [সূরা মু’মিনূন : আয়াত-১-২]
নামায অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
۞اُتْلُ مَ̃ا اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ ط اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ ط وَلَذِكْرُ اللهِ اَكْبَرُ ط وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُوْنَ
অনুবাদ— তোমার প্রতি যে কিতাব নাযিল করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং নামায কায়েম কর। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ ভালো জানেন যা তোমরা কর।[সূরা আনকাবূত : আয়াত-৪৫]
নামায পড়লে নামাযী ব্যক্তিরই উপকার
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِيَةً
۞ يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
অনুবাদ- নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব [কুরআন] তেলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না ।[সূরা ফাতির:আয়াত-২৯]
পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের দ্বারা পাঁচটি পুরস্কার
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যারা সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে আল্লাহ তা’আলা তাদরে পাঁচটি পুরস্কার দিবেন। যথা-
[১] রিযিকের অভাব দূর করে দিবেন।
[২] কবরের আযাব মাফ করে দিবেন ।
[৩] কিয়ামত দিবসে আমলনামা ডান হাতে দিবেন।
[৪] পুলসিরাত বিজলীর ন্যায় পার করিয়ে দিবেন।
[৫] বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ।
নামায বেহেশতের চাবি
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
অনুবাদ— হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- বেহেশতের চাবি হলো নামায, আর নামাজের চাবি হলো অজু ।[সহীহ তিরমিযী : হাদীস-৪, মুসনাদে আহমাদ : হাদীস-১৪৬৬২, মিশকাত শরীফ : হাদীস-২৯৪]
পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লে তার কোন গুনাহ থাকে না
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
অনুবাদ- হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন- “তোমরা বলতো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নহর [ঝর্ণা, প্রস্রবণ বা পুকুর] থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবাগণ উত্তরে বললেন- না, কোন ময়লা থাকবে না। অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন— পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত এমনই। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক নামাযীর সকল গুনাহ মাফ করে দেন ।[সহীহ বুখারী ও মুসলিম : হাদীস-৫২৮]
রাসূল সা. এর শেষ অসিয়ত ছিলো নামায সম্পর্কে
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
অনুবাদ- হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ অসিয়ত ছিলো ‘নামায’, ‘নামায’ [অর্থাৎ তোমরা নামাযের পাবন্দ হও], আর স্বীয় গোলাম ও অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।[সুনানে আবু দাউদ : হাদীস-৫১৫৮]
অতএব, প্রত্যেকেরই নামায পড়া একান্ত আবশ্যক। নামায না পড়িলে আখেরাতের অর্থাৎ, পরজীবনের ক্ষতি তো আছেই, ইহজীবনেরও ক্ষতি আছে। অধিকন্তু যাহারা নামায না পড়িবে, কিয়ামতের দিন তাহাদিগকে কাফিরদের সমতুল্য গণ্য করা হইবে। আল্লাহ্ বাঁচাউক। নামায না পড়া কত বড় অন্যায়। (অতএব, হে ভাই-ভগ্নিগণ! আসুন, আমরা সকলে মিলিয়া অত্যন্ত যত্নসহকারে নামায পড়ি এবং আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ গযব ও দোযখের আযাব হইতে বাঁচিয়া বেহেশতের অফুরন্ত নেয়ামতভোগী হইয়া তাঁহার প্রিয়পাত্র হই।